যশোর সদর উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে আবু সাঈদকে ধরে আটকায় কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। ঠিক কোন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে আটক করা হ...
যশোর সদর উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে আবু সাঈদকে ধরে আটকায় কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। ঠিক কোন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে আটক করা হলো তার কোনো ব্যাখ্যা তো দেওয়া হয়নিই, বরং ছাড়া পেতে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে বসেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।আবু সাঈদের স্বজনেরা ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাতেই তেজেবেগুনে ক্ষেপে যান পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয়। তারা এবার প্রদর্শন করেন এক নাটকীয় নির্যাতন।বুধবার মধ্যরাত। পুলিশ কর্মকর্তাদের কক্ষে পাশাপাশি দুই টেবিলের ওপর একটি গরান কাঠ। কাঠের সঙ্গে পিঠমোড়া করে উল্টো ঝুলন্ত ‘ধৃত’ আবু সাঈদ। তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ঝুলিয়ে রেখেই চলে নির্যাতন।নির্যাতনের প্রদর্শনী চলে সাঈদের স্বজনদের সামনেই। পরিস্থিতি সইতে না পেরে উপস্থিত স্বজনেরা তাৎক্ষণিকভাবে জোগাড় করেন ৫০ হাজারটাকা। তাতেই রাগ কমে দুই পুলিশ কর্মকর্তার। মুক্ত হন সাঈদ।থানার ভেতর থেকে গোপনে তোলা নির্যাতনের এই ছবি স্থানীয়পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের ওপর ক্ষোভ ঝরতে শুরু করে সর্বমহল থেকে। নির্যাতনের এই নাটকীয়তা এবং পুলিশের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে উষ্মা প্রকাশ করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তবে সমস্ত ঘটনা অস্বীকার করছেন সেই দুই কর্মকর্তা।জানা যায়, সাঈদকে বুধবার রাতে আটক করেন যশোর কোতোয়ালী থানার সিভিল টিমের এসআই নাজমুল এবং এএসআই হাদিবুর রহমান। আটকের পরে তারা থানায় ডেকে পাঠান সাঈদের স্বজনদের। সাঈদের মুক্তিরবিনিময়ে দুই লাখ টাকা দাবি করেন তারা।বিষয়টি সম্পর্কে জানতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।’ তিনি ‘অভিযুক্ত’ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন।তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসআই নাজমুল এবং এএসআই হাদিবুর রহমান ওই যুবককে আটক করে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে থানার ভেতরে ঝুলিয়ে পেটানো হয়।এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টিকে উড়িয়ে দেন। তবে নিজেদের ‘দায়মুক্তির’ জন্য এই দুজন বাহিনীর বিভিন্নপর্যায়ে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন।অপরদিকে, নির্যাতিত আবু সাঈদের নামে থানায় মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তিনি মামলায় জামিনে রয়েছেন। বুধবার রাতে তাকে আটক এবং নির্যাতন করা হয় একেবারে বিনা অপরাধে। তবুও ছাড়া পেতে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।বিনা অপরাধে আটক এবং ঘুষ পেয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ছাপিয়ে সর্বত্র এখন আলোচনা ওটাই, নাটকীয় নির্যাতন। অনেকে বলছেন, আসামির ওপর পুলিশি নির্যাতন নতুন কিছু নয়। কিন্তু সাঈদকে যেভাবে থানার ভেতরে উল্টো ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হলো, সেটি পুলিশ বিভাগের মানই ক্ষুণ্ন করলো না কেবল, পুলিশের নতুন চেহারাও উন্মোচন হলো।
No comments